জলপাই আচার বানানোর নিয়ম - জলপাই আচারের রেসিপি ও উপকারিতা
গরম ভাত অথবা খিচুড়ির সাথে যদি একটু টক, ঝাল জলপাইয়ের আচার থাকে তবে সেই খাবারটি খেতে কতই না মজা হয় তাই না? কিন্তু এমন অনেকেই আছে যারা জলপাই আচার বানানোর পদ্ধতি জানেনা। আজকে তাই আপনাদের দেখাবো জলপাই আচার কিভাবে তৈরি করে। অতএব সম্পূর্ণ পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ে নিলে আপনারা জলপাই আচার বানানোর নিয়ম এবং জলপাইয়ের আচার বানানোর রেসিপি পুরোপুরিভাবে শিখে যাবেন।
পোস্ট সূচিপত্র - জলপাই আচার বানানোর নিয়ম - জলপাই আচারের রেসিপি - জলপাই আচার এর উপকারিতা জানুন
জলপাই আচার তৈরির প্রয়োজনীয় উপকরণ
সুস্বাদু ও মুখরোচক জলপাই আচার তৈরি করার জন্য সর্বপ্রথম আপনাদের জানতে হবে জলপাই আচার করতে কি কি লাগে। আচার তৈরির পূর্বে অবশ্যই আপনাকে সেই উপকরণগুলো সংগ্রহ করে নিতে হবে। তবে চলুন জেনে ফেলি জলপাই আচার তৈরির উপকরণ সমূহ কি কি। তাহলে খুব সহজেই আপনারা বাসায় জলপাই আচার বানাতে পারবেন। বলে রাখা ভালো এই উপকরণগুলো আপনারা সব ধরনের জলপাই আচার রেসিপিতে ইউজ করতে পারবেন। উপকরণগুলো নিয়ে আলোচনার পর আমরা পর্যায়ক্রমে জলপাই আচার বানানোর নিয়ম জেনে নেব।
জলপাই আচারের উপকরণ সমূহ:
- জলপাই অন্তত ২ কেজি
- ধনিয়া গুড়া ১/২ চা চামচ
- চিনি বা গুড় ১/২ কাপ পরিমাণ
- কালোজিরা ১/২ চামচ
- হলুদ গুঁড়া ১/২ চামচ
- মরিচের গুঁড়ো ১ চামচ
- পাঁচফোড়ন ২ টেবিল চামচ
- রসুন কুঁচি পরিমাণ মতো
- শুকনো মরিচ ও বোম্বে মরিচ ৮-১০ টি
- জিরার গুড়ো ২ চা চামচ
- মৌরি ১/২ চা চামচ
- লবন পরিমাণ মতো (বিট লবণ)
- ভিনেগার আধা কাপ
- তেজপাতা ৩/৪ টি
- ৪/৫ কাপ পরিমাণ পানি
- দারুচিনি পরিমাণ মতো
- সরিষার তেল ১/২ কাপ
জলপাই আচার বানানোর নিয়ম | জলপাই আচার বানানোর পদ্ধতি
আচার প্রেমীদের কাছে বরাবরই জলপাই একটি আকর্ষণীয় ফল। আপনারা চাইলে সুস্বাদু জলপাই আচার বানিয়ে তা বছরব্যাপী সংরক্ষণ করতে পারেন। ঝটপট জলপাইয়ের আচার বানাতে চাইলে নিম্নোক্ত নিয়ম অনুসরণ করুন। এই নিয়মে আচার তৈরি করলে সেটি রোদে দেওয়ার ঝামেলা পোহাতে হবে না। তবে চলুন জলপাই এর আচার কিভাবে বানায় তার একটি সহজ পদ্ধতি এবার জেনে ফেলি।
প্রথমে ভালোমতো জলপাই গুলো সেদ্ধ করে তার থেতলে ফেলুন। এরপর সরিষা, আদা, রসুন, চিনি, লবণ সহ অন্যান্য উপকরণ ভালোভাবে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে ফেলুন। এরপর বড় কড়াইয়ে সরিষার তেল ও পাঁচফোড়ন ঢালুন। সেই তেলে রসুন ও শুকনা মরিচ ভেজে নিন। সেই উপকরণগুলো দিয়ে তৈরি করা পেস্ট এবার তেলে ঢেলে ভালোভাবে কষিয়ে ফেলুন। কষানোর পরে সেখানে থেঁতো করা জলপাই ঢেলে ক্রমাগত নাড়তে থাকুন। তেলের পরিমাণ কমতে থাকলে চুলোর হালকা আঁচে আরো কিছুক্ষণ রান্না করে নামিয়ে ফেলুন।
ব্যাস! সুস্বাদু জলপাই আচার মুহূর্তের মধ্যেই আপনারা তৈরি করে ফেললেন। এই নিয়মে আপনি বাসায় খুব সহজে জলপাই আচার বানিয়ে ফেলতে পারবেন। রান্নার পরে জলপাই আচার বয়ামে ভরে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করতে পারবেন। বয়ামে রাখলে জলপাই আচার নষ্ট হওয়ার কোন ভয় থাকে না। তবে জলপাই আচার তৈরির রেসিপি রয়েছে অনেকগুলো, যা আমরা পোষ্টের পরবর্তী অংশে পর্যায়ক্রমে আলোচনা করব।
জলপাই আচারের রেসিপি | জলপাই আচার তৈরি করার পদ্ধতি
পোষ্টের পূর্ববর্তী অংশ থেকে অলরেডি আপনারা জলপাইয়ের আচার কিভাবে বানানো হয় সে সম্বন্ধে একটি আইডিয়া পেয়েছেন। এবার আরও কিছু জলপাইয়ের আচার তৈরীর সুন্দর সুন্দর রেসিপি আপনাদের সামনে তুলে ধরব। যেগুলো আপনারা খুব সহজেই বাসায় ট্রাই করে পরিবেশন করতে পারবেন।
রেসিপি ১ - (রসালো ও টক জলপাই আচার):
প্রথমে ফুটন্ত পানিতে অন্তত পাঁচ মিনিট জলপাইগুলো সেদ্ধ করে নিন। পরে সেদ্ধ করার জলপাই হলুদ এবং লবণ মিশিয়ে কিছুটা সময়ের রোদে শুকিয়ে নিন। একটি বাটির ভেতর হলুদ, মরিচ, সরিষা, চিনি, লবণ ও ভিনেগার দিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। কড়াইয়ের ভেতর একটু বেশি পরিমাণে সরিষার তেল দিয়ে রসুন ও পাঁচফোড়ন ভেজে নিন। পরে জলপাই আচারের মসলা তৈরির জন্য সেই পেস্ট তেলে ডুবিয়ে ভালোভাবে কষিয়ে ফেলুন। সবশেষে সেদ্ধ করা আস্ত জলপাই গুলো দিয়ে ভালোভাবে নাড়তে থাকুন। সোডিয়াম বেঞ্জয়েড (ভিনেগার) দিয়ে হালকা নেড়ে নামিয়ে ফেলুন। বাহ কি দারুণ! তৈরি হয়ে গেল সুস্বাদু রসালো টক-স্বাদ যুক্ত জলপাইয়ের আচার।
আরও পড়ুন: বরই খেলে কি উপকার হয় - গর্ভাবস্থায় বরই খাওয়ার উপকারিতা
রেসিপি ২ - (ঝাল-টক-মিষ্টি জলপাই আচার):
এক কেজি পরিমাণ জলপাই নিয়ে সেটি ভালোভাবে সিদ্ধ করুন। সিদ্ধ করার পর একটি পাত্রে চটকে রাখুন। আপনার এই রেসিপিটি বানানোর সময় মনে রাখতে হবে, জলপাই আচারের সকল মসলা ও উপকরণ পরিমাণ মতো দিতে হবে। অতঃপর চটকানো জলপাইয়ের সাথে লবণ, চিনি, পাঁচফোড়ন, হলুদ, ভিনেগার ইত্যাদি মাখিয়ে আধা ঘন্টা রেখে দিন। তারপর রসুন কুচি ও সরিষার তেল কড়াইয়ের ভেতর ভালোভাবে পাঁচফোড়ন সহকারে কষিয়ে নিন। এরপর তাতে মসলা সহ চটকানো জলপাই ঢেলে হালকা তাপে কিছুক্ষণ রান্না করুন। নিমিষেই তৈরি হয়ে গেল মজাদার টক-ঝাল-মিষ্টি স্বাদের জলপাই আচার।
রেসিপি ৩ - (জলপাইয়ের স্পঞ্জ আচার)
বন্ধুরা আপনার ইতোমধ্যে ২টি জলপাইয়ের আচার বানানোর রেসিপি শিখে নিয়েছেন। এবার আরও একটি রেসিপি আপনাদের সাথে শেয়ার করব। সেজন্য জলপাই কুচি করে কেটে লবণ মাখিয়ে কয় ঘন্টা রেখে দিন। অতঃপর পাতলা কাপড় দিয়ে ছেঁকে সমস্ত টক পানি বের করে ফেলুন। এরপর লবণ, কাশন, সরিষা বাটা, পাঁচফোড়ন, রসুন ও পরিমাণ মতো তেল জলপাইয়ের সাথে মাখিয়ে কাচের জীবাণুমুক্ত স্বচ্ছ বোতলে ভরে রাখুন। কয়েকদিন পরেই আপনি জলপাইয়ের স্পঞ্জ আচার পরিবেশন করতে পারবেন। বোতলের নিচে জলপাই আচারের তেল জমা হলে জলপাইগুলো ঘেঁটে তেলের সাথে মিশিয়ে নিন।
রেসিপি ৪ (ঝাল জলপাই আচার):
বন্ধুরা আপনার ইতোমধ্যে জলপাই আচার বানানোর নিয়মগুলো দেখে ফেলেছেন। এবার আপনাদের সাথে সর্বশেষ আরো একটি রেসিপি তৈরির নিয়ম আলোচনা করব। এজন্য প্রথমে জলপাই আচার ভালোভাবে চটকে নিন। এরপর হলুদ, মরিচ, ধনে, আদাবাটা, সরিষা, লবণ, চিনি পরিমাণ মতো মাখিয়ে ভালোভাবে পেস্ট তৈরি করুন। কড়াইয়ে কালোজিরা, পাঁচফোড়ন ও বেশ কয়েকটি বোম্বে মরিচ দিয়ে ভালোভাবে ভাজুন। এরপর জলপাই আচারের মসলাযুক্ত পেস্ট ভালোভাবে কষিয়ে তেল ছাড়িয়ে নিন। এ সময় ভিনেগার ব্যবহার করলে জলপাইয়ের চটকানো ভাব কমে যাবে। তৈরি হয়ে গেল সুস্বাদু ও জিভে জল আনা ঝাল জলপাই আচার।
বন্ধুরা পোষ্টের এই অংশে আমরা জলপাই আচার তৈরির রেসিপি গুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। এই রেসিপিগুলো অনুসরণ করলে আপনারা খুব সহজেই সকল পদের জলপাই আচার বাসায় বসেই তৈরি করতে পারবেন। প্রত্যেকটি রেসিপিতে আপনারা পরিমাণ মতো উপকরণগুলো ব্যবহার করবেন। আশা করি এখন জলপাই আচার কিভাবে বানায় তথা জলপাই আচার বানানোর নিয়ম সংক্রান্ত আপনাদের আর কোন কনফিউশন থাকলো না।
জলপাই আচার এর উপকারিতা
যারা একটু ঝাল লাভার মানুষ রয়েছেন তারা চাইলে জলপাইয়ের ঝাল আচারটি বানিয়ে খেতে পারেন। শীতের সকালে ধোঁয়া ওঠা খিচুড়ির প্লেটে যদি একটু জলপাই আচার থাকে তাহলে খাবারের স্বাদে আলাদা মাত্রা যুক্ত হয়। ভোজন রসিক মানুষদের জন্য তাই জলপাইয়ের আচার দারুন একটি রেসিপি। এবার আপনাদের উদ্দেশ্যে জলপাইয়ের আচারের উপকারিতা কি কি সে বিষয়টি এক নজরে জানিয়ে দেব।
আরও পড়ুন: চন্দন গাছ কোথায় পাওয়া যায় - চন্দন মুখে দিলে কি হয়
- জলপাই আচার সাধারণত টক হওয়ায় এর ভেতরে প্রচুর পরিমাণে ডায়াটরি ফাইবার বা আঁশ থাকে যা আমাদের হজমে সহায়ক।
- শরীরের অভ্যন্তরে কোলন, ক্ষুদ্রান্ত, বৃহদান্ত, পাকস্থলী ইত্যাদিতে ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমাতে জলপাই আচারের ভূমিকা অত্যন্ত কার্যকরী।
- কাঁচা জলপাইে প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ রয়েছে। আচার হিসেবে জলপাই খেলেও তাই শরীরের ক্ষয়পূরণ ও প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
- জলপাইয়ের আচারে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ও ফ্যাটি এসিড বিদ্যমান আছে যা আমাদের চুল ও ত্বকের যত্নে দারুণভাবে উপযোগী। চুলের গোড়ায় জলপাই আচারের তেল মাখলে অসময়ে চুল পড়া রোধ হবে। সেই সাথে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে তক্কের রক্ষা করতে জলপাই আচার নিয়ামকের ভূমিকা পালন করে।
- রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি রাশ করতে সাহায্য করে জলপাই আচার। তাই প্রত্যেক দিনের খাবার তালিকায় কিছুটা পরিমাণ জলপাই আচার রাখতে পারেন।
- এছাড়াও জলপাই আচার আয়রনের বৃহৎ উচ্চ হিসাবে কাজ করে। রক্তে লোহিত রক্ত কণিকার পরিমাণ কমে গিয়ে শরীর দুর্বল হয়ে পড়লে, জলপাই আচার খেলে শরীর পুনরায় চাঙ্গা হয়।
- বাত ব্যথা, গ্যাস্ট্রিক, আলসার, হার ক্ষয়, চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি প্রভৃতি ক্ষেত্রে জলপাই আচারের বিকল্প নেই। তাই জলপাই আচারের উপকারী ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
জলপাই আচারের দাম কত
জলপাই আচারের ভেতর যত বেশি মসলা থাকবে সেই আচার খেতে তত সুস্বাদু হবে। হ্যাঁ বন্ধুরা ঠিকই শুনেছেন। সেজন্য বাসায় বানাতে না পারলে অধিক মসলাযুক্ত ভালো মানের জলপাই আচার ক্রয় করার চেষ্টা করবেন। চলুন তবে জলপাই আচারের দাম সম্পর্কে আপনাদের কিছু আইডিয়া দেই।
- রুচি (৪০০ গ্রাম) জলপাই আচার এর মূল্য মাত্র ১৮৫/- টাকা।
- প্রাণ (৪০০ গ্রাম) জলপাই আচারের দাম ১৫০/- টাকা।
- চুই ঝাল (৪৬০ গ্রাম) জলপাই আচারের দাম বর্তমানে ৪১০/- টাকা।
- ডুমুর (২০০ গ্রাম) জলপাই ঝাল আচারের দাম ১৫০/- টাকা।
- Olive Pickle (৩৫০ গ্রাম) জলপাই আচারের মূল্য ৩০৫/- টাকা
জলপাই আচারের ছবি
বন্ধুরা ইতোমধ্যে আপনাদের সাথে জলপাই আচার বানানোর নিয়ম এবং জলপাই আচারের রেসিপিগুলো সহজ ভাষায় উপস্থাপন করেছি। এখন আপনাদের সামনে জলপাই আচারের কিছু লোভনীয় পিক প্রদর্শন করলাম।
শেষ বক্তব্য - জলপাই আচার তৈরির নিয়ম ও রেসিপি
বন্ধুরা, নিশ্চয়ই এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা খুব সহজে জলপাই আচার তৈরির রেসিপি শিখে নিতে পেরেছেন। আশা করি জলপাই আচার বানানোর নিয়ম আপনাদের কাছে কঠিন মনে হয়নি। খাবারের স্বাদ বর্ধন ও স্বাস্থ্য উপকারিতা বিবেচনা করে আপনারা মাঝেমধ্যে জলপাই আচার বানাতে পারেন। জলপাই আচার বানানোর এই দারুন রেসিপি গুলো শিখে রাখলে তা আপনাদের উপকারে আসবে বলে মনে করছি। পোস্টটি কেমন লাগলো তা কমেন্ট সেকশনে জানান এবং সবার মাঝে শেয়ার করে দিন। নিত্য নতুন খাবারের রেসিপি বিষয়ক আরো পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন।
অনির্বাণ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url