নাকের পলিপাস এর ড্রপ এর নাম, ওষুধ - নাকে পলিপাস হলে করণীয়
নাকের অভ্যন্তরে অতিরিক্ত মাংস বাড়লে নাকের পলিপাস সৃষ্টি হয়। এ সমস্যাটি বাচ্চা থেকে শুরু করে বয়বৃত্য মানুষের হতে দেখা যায়। অনেক সময় নাকের পলিপাসের কারণে শ্বাসকষ্টের মত সমস্যা দেখা দেয়। আপনাদের সুবিধার্থে আজকের এই আর্টিকেলে আমরা নাকের পলিপাস এর ড্রপ এর নাম, নাকের পলিপাস হলে কি কি সমস্যা হয়, নাকে পলিপাস হলে করণীয় সহ নাকের পলিপাস থেকে মুক্তির জন্য আপনি কি ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন ইত্যাদি বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা মূলক আলোচনা করব।
সূচিপত্রঃ নাকের পলিপাস এর ড্রপ এর নাম - নাকে পলিপাস হলে করণীয়
- নাকের পলিপাস কেন হয়
- নাকের পলিপাস হলে কি কি সমস্যা হয়
- নাকে পলিপাস হলে করণীয়
- নাকের পলিপাস এর ঘরোয়া চিকিৎসা
- নাকের পলিপাস এর ড্রপ এর নাম
- নাকের পলিপাস এর ওষুধ এবং চিকিৎসা
- নাকের পলিপাস এর হোমিও ঔষধ
- নাকের পলিপাস থেকে মুক্তির উপায়
- আমাদের শেষ কথা
নাকের পলিপাস কেন হয় | নাকের পলিপাসের লক্ষণ
আমাদের শরীর যদি কোন রোগে আক্রান্ত হয় তাহলে সেই রোগ বোঝার জন্য আগে থেকে বেশ কিছু লক্ষণ প্রকাশিত হয়। কিন্তু নাকের পলিপাসের লক্ষণগুলো আপনারা জানেন কি? নাকের পলিপ আমাদের কাছে খুবই পরিচিত একটি রোগ। সাধারণত নাকের ভেতরকার মাংস বৃদ্ধি পেলে তাকে নাকের পলিপ বলা হয়। আপনার যদি এই রোগ হয়ে থাকে তবে নাকের পলিপাস এর ড্রপ কোনগুলো ইউজ করবেন এবং নাকের পলিপাস এর চিকিৎসায় কি পদক্ষেপ নিবেন সে বিষয়গুলো জানা জরুরী।
নাকের পলিপাস কেন হয়ে থাকে এর কারণ এখনো জানা যায়নি। তবে বেশিরভাগ চিকিৎসকগণ বলে থাকে যে এলার্জিজনিত কারণে সাধারণত এই সমস্যা হয়ে থাকে। বিশেষ করে যাদের নাকের দীর্ঘদিন ধরে এলার্জি রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে এমনটা লক্ষ্য করা যায়। সাধারণভাবে নাকের পলিপ বুঝার অন্যতম একটি লক্ষণ হলো নাক বন্ধ থাকা। কিন্তু নাক বন্ধ থাকার আরো বেশ কিছু কারণ রয়েছে।
যদি আপনার নাকের পলিপ হয়ে থাকে তাহলে দীর্ঘদিন ধরে আপনার নাক বন্ধ থাকবে। বিভিন্ন ধরনের স্প্রে ব্যবহার করার পরেও নাক বন্ধ হওয়া ছুটবে না। নাকের পলিপ বুঝার আরেকটি অন্যতম লক্ষণ হলো নাক দিয়ে প্রচুর পরিমাণে পানি পড়া। অন্যান্য সময়ের চাইতে অতিরিক্ত পরিমাণে হাঁচি আসা। নাকের মধ্যে কোন ধরনের গন্ধ প্রবেশ না করা। এ ছাড়াও দুর্গন্ধ বেশি পরিমাণে পাওয়া নাকের পলিপাসের একটি লক্ষণ।
যখন নাকের পলিপাস হালকা পরিমাণে থাকে তখন মাথা ব্যথাও অল্প পরিমাণে হয়। তবে যখন এটি বৃদ্ধি পায় মাথা ব্যাথার পরিমাণও ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে পারে। এছাড়া নাকের পলিপাস হলে ঘুমাতে অসুবিধা হয় এবং শ্বাস-প্রশ্বাস নিতেও প্রচুর কষ্ট হয়ে থাকে। যদি আপনার নাকের পলিপাস হয়ে থাকে তাহলে এই লক্ষণগুলোই মূলত প্রকাশ পাবে। আশা করি নাকের পলিপাস কেন হয় এবং এর লক্ষণসমূহ সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা পেয়েছেন। নাকের পলিপাস এর ড্রপ দিলে এ অবস্থা থেকে খানিকটা উপশম পাওয়া যায়।
নাকের পলিপাস হলে কি কি সমস্যা হয়
আমরা যেহেতু নাকের পলিপাস সমস্যা নিয়ে আলোচনা করছি সেহেতু আমাদেরকে এই নাকের পলিপ হলে আসলে কি কি সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় এ বিষয়গুলো জেনে নিতে হবে। কারণ নাকের পলিপাস হলে নাকের ভেতরকার মাংস বেড়ে ছোটবড় নানান সমস্যা হয়ে থাকে। চলুন নাকের পলিপাস হলে কি কি সমস্যা হয় তা জেনে নেওয়া যাক। পরবর্তী অংশে আমরা নাকের পলিপাস এর ড্রপ এর নামও জেনে নিব।
আরও পড়ুন: পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায় দোয়া - মাসিকের ব্যথায় করণীয়
- নাক বন্ধ হওয়া: শুধু যে সর্দির কারণেই নাক বন্ধ হয় তা কিন্তু নয়। নাকের পলিপ হলে তা নাকের ভেতরের বিভিন্ন অংশকে আচ্ছন্ন করে দেয়, যার ফলে নাক বন্ধ হওয়ার দরুন নাক দিয়ে শ্বাস নিতে অসুবিধা সৃষ্টি হয়।
- অস্বাভাবিক হাঁচি: অস্বাভাবিকভাবে দীর্ঘদিন হাঁচি হতে থাকলে সেটি নাকের ভেতরে পলিপ সৃষ্টির কারণে হয়ে থাকে। নাকের পলিপাস আসলে নাকের ভেতরের টিস্যুকে উত্তেজিত করে, যার ফলে ঘনঘন হাঁচি আসতে থাকে।
- নাক দিয়ে ক্রমাগত পানি পড়া: ঠান্ডা লাগার কারণে যেমন নাক দিয়ে পানি পড়ে তেমনি নাকের পলিপাসের জন্যও নাক দিয়ে পানি পড়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। নাকের ভেতরের পলিপ মূলত নাকের অভ্যন্তরস্থ সকল টিস্যুকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, যার ফলে নাক দিয়ে ক্রমাগত পানি পড়তে থাকে।
- ঘ্রাণশক্তি হ্রাস পাওয়া : হঠাৎ ঘ্রাণশক্তি কমে যাওয়ার জন্য দায়ী হলো নাকের অভ্যন্তরের পলিপাস। পলিপ হলে সহজে কোন কিছুর ঘ্রাণ আমরা নিতে পারি না। ফলে এক ধরনের অস্বস্তিকর অনুভূতির সৃষ্টি হয়।
- তীব্র মাথাব্যথা: নাকের পলিপাস আমাদের সাইনাসের প্রদাহের সৃষ্টি করতে পারে যার কারণে অসহনীয় মাত্রার মাথাব্যথা দেখা দেয়। যা সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে আরও বৃদ্ধি পেতে থাকে।
- ঘুমের সমস্যা: কারো পলিপ হলে এটি প্রায়ই নাক পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়, যার ফলে মুখ দিয়ে নিশ্বাস নেওয়ার কারণে ঘুমের ব্যাপক ব্যাঘাত সৃষ্টি হতে পারে। নাকের পলিপাস বেড়ে গেলে বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে রাতের ঘুমে তীব্র সমস্যা দেখা দেয়।
- অবসাদ: অল্পতেই শরীরে ক্লান্তি ভাব চলে আসা এবং অবসাদগ্রস্থ হওয়ার পেছনে নাকের পলিপাস দায়ী রয়েছে। নাকের পলিপ হলে যেকোনো কাজের উপর থেকে মনোযোগ চলে যায় ও অনেকে অল্পতেই হাঁপিয়ে উঠে।
নাকের পলিপাস হলে করণীয় কি | নাকে পলিপাস হলে কি করব
এখন আমরা অনেকেই এলার্জি সমস্যায় ভুগে থাকি। এলার্জির কারণে নাকের পলিপ এর সমস্যা হয়ে থাকে। নাকের পলিপ হলে বেশ কিছু করণীয় রয়েছে। যেহেতু এটি জটিল একটি রোগ তাই আমাদেরকে স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য এর করণীয় গুলো সম্পর্কে জেনে রাখতে হবে। তাহলে নাকের পলিপ ছোট থাকা অবস্থাতেই আমরা এটিকে কমাতে পারবো।
যদি আপনি পলিপের লক্ষণগুলো দেখে নাকের পলিপ প্রাথমিক অবস্থায় নির্বাচন করতে পারেন তাহলে আপনি ওষুধের মাধ্যমে খুব সহজে এদিকে কমাতে পারবেন। এছাড়া নিজে সতর্ক হয়ে এবং বেশ কিছু ঘরোয়া পদ্ধতির মাধ্যমে নাকের পলিপ কমানো যায়। এক্ষেত্রে প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে আপনাকে বাইরে গেলে মুখে অবশ্যই মার্ক ব্যবহার করতে হবে যেন নাকের ভেতর দিয়ে কোন ধুলোবালি প্রবেশ না করে।
এ বিষয়টি আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ নাকে ইনফেকশন থাকলে এবং তার মধ্যে ধুলোবালি প্রবেশ করলে নাকের পলিপ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। এ ছাড়া এলার্জির বেশ কিছু ওষুধ পাওয়া যায় এই ওষুধগুলো খাওয়ার ফলে আমরা খুব সহজে প্রাথমিক অবস্থা থেকে নাকের পলিপ দূর করতে পারি। পরবর্তীতে নাকের পলিপাস এর ড্রপ এর নাম গুলোও আপনাদের জানিয়ে দিব।
যদি নাকের পলিপ অনেক বড় হয়ে যায় এবং সম্পূর্ণ নাক ঢেকে ফেলে তাহলে অপারেশন করে এটি বাদ দিতে হয়। তবে এই অপারেশন কোন জটিলতম অপারেশন নয়। অল্প সময়ের মধ্যেই এই অপারেশন সম্পন্ন করা যায়। এক্ষেত্রে আপনাকে একটি ভালো চিকিৎসক নির্বাচন করতে হবে এবং বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা করার মাধ্যমে নাকের পলিপ অপসারণ করতে হবে।
নাকের পলিপাস এর ঘরোয়া চিকিৎসা
বেশ কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করে আপনি নাকের পলিপাসের চিকিৎসা করতে পারেন। আপনারা চাইলে এ পদ্ধতিগুলো বাসায় অনুসরণ করে দেখতে পারেন। তবে চলুন নাকের পলিপাস দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলো এক নজরে জেনে ফেলি।
নাকের ছিদ্র ভালোমতো পরিষ্কার করা: নাকের উভয় ছিদ্র পরিষ্কার রাখা নাকের পলিপাস কমাতে সাহায্য করতে পারে। এজন্য, আপনি লবণজল দিয়ে নিয়মিতভাবে নাকের ছিদ্র পরিষ্কার করতে পারেন। প্রথমে, এক গ্লাস উষ্ণ পানিতে এক টবিল চামচ পরিমাণ লবণ মিশিয়ে নিন। এরপর, একটি স্প্রে বোতলে মিশ্রণটি ভরে নিন এবং নাকের ছিদ্রে সাবধানতার সহিত স্প্রে করুন। কয়েক মিনিট ধরে নাকের ছিদ্রে কিছুটা পানি রাখুন এবং তারপর সেটি ঝরিয়ে সমস্ত নাক পরিষ্কার করে ফেলুন। এর ফলে নাকের ভেতরে সব ধরনের ময়লা আবর্জনা বেরিয়ে আসবে।
বাষ্প গ্রহণ: বর্তমানে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় বাষ্প নেওয়া নাকের পলিপাস কমানোর অন্যতম ঘরোয়া একটি পদ্ধতি। এজন্য, একটি বড় পাত্রে গরম পানি নিন এবং এর উপরে একটি তোয়ালে দিয়ে মাথা ঢেকে নিন। এরপর, ৫-১০ মিনিট ধরে নির্দিষ্ট বিরতিতে নাক দিয়ে বাষ্প নিন। এভাবে কয়েকদিন করতে থাকলে নাকের পলিপাস সমস্যার ভালো ফলাফল পাবেন।
আদা: আমাদের সকলের সুপরিচিত মসলা আদাতে বিশেষ অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা নাকের পলিপাসের চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারে। আপনি আদা চা বানিয়ে, আদা রস করে জুস হিসাবে বা আদা টুকরো করে খেয়ে দেখতে পারেন। এতে করে নাকের পলিপাস সমস্যাটির জন্য প্রত্যাশিত ফল মিলবে।
গরম সেঁক: বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার জন্য সেঁক দেওয়া অত্যন্ত প্রাচীন একটি ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতি। গরম সেঁক নাকের পলিপাস কমাতে দারুণ সাহায্য করতে পারে। এজন্য, একটি তোয়ালে গরম পানিতে আংশিক ভিজিয়ে নিন এবং নাকের ছিদ্রে ১০-১৫ মিনিট যাবত সেঁক দিন। দেখবেন ধীরে ধীরে নাকের পলিপাস সমস্যা কমতে শুরু করেছে।
অ্যালোভেরা: অ্যালোভেরার প্রাকৃতিক গুণের কথা বলে শেষ করা যাবে না। নাকের পলিপাসের বিরুদ্ধে কার্যকরী একটি প্রাকৃতিক উপাদান হিসাবে এলোভেরা ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। সেজন্য প্রত্যেকদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে অ্যালোভেরা জেল নাকের ছিদ্রে ভালোভাবে লাগিয়ে ঘুমাতে পারেন। পরে ঘুম থেকে উঠে নাক ভালোভাবে পরিষ্কার করে ফেলুন।
রসুন: প্রাকৃতিক উপাদান রসুনের ভেতের উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে। আপনি রসুন চা, রসুনের রস বা রসুন টুকরো করে খেতে পারেন। একটি নাকের পলিপাসের বিরুদ্ধে দারুণ প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।
ওটমিল: আপনারা হয়তো ওটমিলের নাম শুনে থাকবেন। ওটমিলের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণাগুণ নাকের পলিপাসের চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারে। আপনি ওটমিল স্যুপ, ওটমিল স্মুদি বা ওটমিল ব্রেকফাস্টে আদর্শ খাবার হিসাবে নিয়মিত খেতে পারেন।
সুতরাং এই অংশ থেকে আপনারা ঘরোয়া ভাবে নাকের পলিপাস কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন সে বিষয়টি সম্পর্কে দারুন একটি আইডিয়া পেয়ে গেলেন।
নাকের পলিপাস এর ড্রপ এর নাম
আশা করি নাকের পলিপাস হলে করণীয় কি এই বিষয়টি।ইতোমধ্যে জানতে পেরেছেন। নাকের পলিপ বড় হওয়ার আগে আমাদেরকে এটি নির্ণয় করে এখান থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় গুলো জেনে নিতে হবে। কারণ বর্তমান সময়ে বেশ কিছু ওষুধ পাওয়া যা বেশিরভাগই ড্রপ হয়ে থাকে। এই ড্রপগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা খুব সহজেই নাকের পলিপাস দূর করতে পারব। যেমন:
আরও পড়ুন: কাঁচা হলুদের উপকারিতা কি কি - কাঁচা হলুদ মুখে মাখলে কি হয়
- নাসাল ড্রপ
- নোস ড্রপ
- ইত্যাদি ড্রপ যা ডাক্তারের পরামর্শে ব্যবহার করতে হবে।
সাধারণত এই স্প্রে ড্রপ গুলো নাকের ভেতরকার মাংশ বৃদ্ধি, চুলকানি, জ্বালাপোড়া এবং মাথা ব্যথা কমাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে আপনার নাকের যে সকল সমস্যায় এই স্প্রে গুলো ব্যবহার করলে খুব সহজেই উপযুক্ত সমাধান পাওয়া যায়। যদি আপনি নাকের পলিপ সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে অবশ্যই এই স্প্রে গুলো চিকিৎসকের পরামর্শ ও তাদের দেখানো নিয়ম অনুযায়ী ব্যবহার করবেন।
নাকের পলিপাস এর চিকিৎসা | নাকের পলিপাসের ঔষধের নাম
ঔষধী চিকিৎসার মাধ্যমে পলিপের উপসর্গগুলি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পলিপ সম্পূর্ণরূপে অপসারণ করা হয়। অস্ত্রোপচারের দুটি প্রধান পদ্ধতি হলো:
অন্ডোস্কপিক পলিপেকটমি: এই আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে নাকের অভ্যন্তরে দিকে একটি পাতলা নল ঢোকানো হয়। এই নলের ভেতর দিয়ে একটি ক্যামেরা এবং ছোট ছোট যন্ত্রাংশ ঢোকানো হয়। ক্যামেরার মাধ্যমে পলিপের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং ছোট ছোট যন্ত্রাংশ দিয়ে পলিপ অপসারণ করা হয়। এটি বর্তমানে নাকের পলিপাসের একটি নির্ভরযোগ্য চিকিৎসা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
অপারেটিভ পলিপেকটমি: এই চিকিৎসা কৌশলে নাকের ভেতরের দিকে একটি বড় ছেদ দেওয়া হয়। এই ছেদের মাধ্যমে পলিপ অপসারণ করা হয়। অস্ত্রোপচারের পর কিছুদিনের জন্য নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নিতে অসুবিধা হতে পারে। তবে, ধীরে ধীরে এই সমস্যাগুলি দূর হয়ে যায়।
নাকের পলিপাস এর চিকিৎসার জন্য কোন পদ্ধতি সবচেয়ে উপযুক্ত তা রোগীর সার্বিক অবস্থার উপর নির্ভর করে। নাকের পলিপাস এর চিকিৎসার জন্য অবশ্যই একজন ভালো নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। বাংলাদেশে নাকের পলিপাসের জন্য ব্যবহৃত কিছু সাধারণ ঔষধের নাম হলো:
১) স্টেরয়েড ঔষধ: বাজারে প্রচলিত স্টেরয়েড জাতীয় বেশকিছু ঔষধ নাকের পলিপাসের আকার কমাতে সাহায্য করে থাকে। তবে অবশ্যই এটি ডাক্তারের পরামর্শ সেবন করা উচিত।
২) অ্যান্টিহিস্টামিন ঔষধ: অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় সকল ঔষধ মূলত নাক বন্ধ হওয়া, নাকে শ্লেষা জমা হওয়া এবং সর্দির মতো সমস্যা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। আন্টি হিসটামিন ওষুধগুলো ডাক্তাররা নাকের সমস্যার জন্যই মূলত সাজেস্ট করে থাকে।
৩) অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট জাতীয় ঔষধ: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ঔষধ নাকের পলিপাসের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি রোধ করতে অগ্রণী ভূমিকা রাখে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ঔষধের কিছু উদাহরণ হলো: ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, জিঙ্ক ইত্যাদি।
নাকের পলিপাস এর হোমিও ঔষধ
নাকের পলিপাস এর ড্রপ এর নাম কি কি আপনারা অলরেডি তা অবগত হয়েছেন। বিনা অপারেশনে নাকের পলিপাস চিকিৎসার জন্য হোমিওপ্যাথি ওষুধগুলো দারুন কার্যকরী। নাকের পলিপাসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত কিছু হোমিও ঔষধ হলো:
১) ক্যালি কার্বোনিকা: বিখ্যাত এই হোমিওপ্যাথি ওষুধটি নাকের পলিপাস সমস্যা, নাকের ছিদ্র থেকে রক্তপাত হওয়া, ঠান্ডা লোগে নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং নাক দিয়ে শ্লেষ্মা ঝরার মতো লক্ষণগুলির জন্য অব্যর্থ ঔষধ হিসেবে কাজ করে থাকে। এই ওষুধটি সেবনের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
২) সালফার: সালফার মূলত নাকের পলিপাস, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, মাথাব্যথা হওয়া এবং অনিদ্রা সমস্যার এক আদর্শ প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে।
৩) সিলিকা: বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সিলিকা নাকের পলিপাস, নাক থেকে শ্লেষ্মা ঝরা এবং অনিয়মিত মাথাব্যথা হলে মূলত চিকিৎসকরা সেবন করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
৪) ক্যালকেরিয়া কার্বনিকা: এই হোমিও ঔষধটি নাকের পলিপাস, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, এবং ঘুমের সমস্যার জন্য সাজেস্ট করা হয়ে থাকে। তবে ওষুধগুলো অবশ্যই বিশেষজ্ঞ হোমিও ডাক্তারের পরামর্শ খেতে হবে। কোনমতেই এই ওষুধগুলো ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নিজে থেকে সেবন করা যাবেনা।
নাকের পলিপাস থেকে মুক্তির উপায় | নাকের পলিপাস দূর করার উপায়
বন্ধুরা আজকের পোষ্টের মূল উদ্দেশ্য ছিল নাকের পলিপাসের ড্রপ এর নাম আপনাদের জানানো এবং নাকের পলিপাসের চিকিৎসায় আপনারা কি করবেন সে বিষয় নিয়ে। এবার নাকের পলিপাস দূর করার উপায় হিসেবে সাধারণ কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা নিন।
আরও পড়ুন: নাকের দুই পাশে কালো দাগ দূর করার উপায়
- অ্যালার্জি প্রতিরোধ: অ্যালার্জি নাকের পলিপাসের অন্যতম প্রধান কারণ। তাই অ্যালার্জি থেকে দূরে থাকতে হবে। অ্যালার্জি জাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকা, অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধ সেবন এবং ইনহেলার ব্যবহারের মাধ্যমে অ্যালার্জি প্রতিরোধ করা যায়।
- ধূমপান ও অ্যালকোহল বর্জন: ধূমপান নাকের পলিপাসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। তাই এখনি ধূমপান ও অ্যালকোহল পুরোপুরিভাবে এড়িয়ে চলুন।
- সঠিকভাবে নাক পরিষ্কার করুন: নাকে আঘাত লাগলে সেখানে পলিপাস সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে। নাক পরিষ্কার করার সময় নাকের ভেতরের নরম অংশকে আঘাত না করাই ভালো। সেজন্য অবশ্যই নাক পরিষ্কার করার জন্য নরম কাপড় বা তুলা ব্যবহার করুন।
- নিয়মিত শরীরচর্চা ও ঘুম: নিয়মিত শরীরচর্চা করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। তাই নিয়মিত শরীরচর্চা করুন। সকাল ও বিকালের একটি নির্দিষ্ট সময় ফিক্স করে শরীরচর্চা চালিয়ে যান। প্রত্যেকদিন অন্তত ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করুন।
- সুষম খাদ্য গ্রহণ ও পানি পান: সুষম খাদ্য গ্রহণ করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। তাই প্রচুর পরিমাণে ফল, শাকসবজি, এবং ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার খান। যেমন: কমলা, লেবু, আম, আপেল, টমেটো, সবুজ শাকসবজি ইত্যাদি। এছাড়া প্রতিদিন অধিক পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
- দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকুন: যেকোনো শারীরিক সমস্যার পেছনে লুকায়িত থাকে অনাকাঙ্ক্ষিত মেন্টাল স্ট্রেস। সেজন্য চিন্তামুক্ত থেকে স্বাস্থ্য বিধি মোতাবেক স্বাভাবিকভাবে জীবন যাপনের অভ্যাস গড়ে তুলুন।
আপনারা যদি এখনো নাকের পলি পাসের ড্রপ এর নাম এবং নাকের পলিপাসের চিকিৎসা সম্পর্কে না জেনে থাকেন তবে পোস্টের আগের অংশ আবারও ভালোভাবে পড়ে নিন।
আমাদের শেষ কথাঃ নাকের পলিপাস এর ড্রপ, চিকিৎসা ও ঔষধ - নাকে পলিপাস হলে করণীয়
প্রিয় পাঠকগণ আজকের এই আর্টিকেলে নাকের পলিপাস এর চিকিৎসা, নাকের পলিপাস এর ড্রপ এর নাম, নাকের পলিপাস হলে কি কি সমস্যা হয় এই বিষয়গুলো বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। যেহেতু পলিপ আমাদের কাছে খুবই কমন একটি সমস্যা, তাই নাকের পলিপাসের ঔষধ গুলো অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক নিয়মিত সেবন করতে হবে।
তবে মনে রাখবেন নাকের পলিপগুলোর বিরুদ্ধে সাধারণ অবস্থাতেই যদি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় তাহলে নাকের পলিপাস থেকে চির মুক্তি মিলবে। এতক্ষণ আমাদের আর্টিকেলের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ এবং তথ্য নির্ভর আর্টিকেল আরো পড়তে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। কারণ আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন দরকারি আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি।
অনির্বাণ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url